FB!

Saturday, February 16, 2019

আমার পর্যটন ভাবনা (পর্ব -১)


আমার সাম্প্রতিক মেঘালয় ভ্রমণ নিয়ে অনেকদিন ধরেই লিখব ভাবছলাম। পরে মনে হলো শুধু ভ্রমণ নয়, বরং সেখানকার ভ্রমণ থেকে পাওয়া শিক্ষণীয় বিষয় নিয়ে লিখি।

মেঘালয় ভ্রমণ করতে গিয়ে প্রথমেই যে ব্যাপারটি উপলব্ধি করেছি, তা হলো ওরা ওদের সবকিছুকেই পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় হিসেবে উপস্থাপন করছে।

সিলেট বেড়াতে আসলে সবাই আমাদের জাফলং এর যে জায়গায়টায় যায় অর্থাৎ জিরো পয়েন্ট, সেখানে গিয়ে আমাদের পর্যকটকরা শুধুমাত্র ভারত সীমান্তের ঝুলন্ত ব্রিজটি ছাড়া এই মুহূর্তে আর কী কিছু দর্শনীয় আছে! অথচ স্বচ্ছ পানির পিয়াইন নদীটিও ছিল একসময় কত আকর্ষনীয়, অথচ ভারতীয় অংশের একই নদী (সেখানে অবশ্য নাম উমগট নদী) এখনো অনেক আকর্ষনীয়। প্রচুর পরিমাণ ভারতীয় পর্যটক তাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই স্বচ্ছ পানির নদীটি দেখতে আসেন। উপর থেকে তোলা ছবিতে নদীতে ভাসমান এক একটি নৌকাকে মনে হয় পানিতে নয় যেন বাতাসে ভাসছে নৌকা। 


তারপর ওদের মাউলিনং ভিলেজ, যেটাকে বলা হয় এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম, শুধুমাত্র এই গ্রামটি দেখার জন্য প্রতিদিন ভীড় জমায় হাজারো পর্যটক। অথচ এই গ্রামটি আহামরি কিছুই নয় ছোট্ট একটি গ্রাম, এই গ্রামে পর্যটকদের প্রবেশ কিন্তু ফ্রি নয় জনপ্রতি ১০ রূপি/গাড়িপ্রতি ৫০ রূপি দিয়ে প্রবেশ করতে হয়। গিয়ে কী দেখবেন, কিছু সুন্দর বাড়ি, পর্যটকদের জন্য সুন্দর করে সাজানো দোকানপাট আর প্রতিটি বাড়ীর সামনে একটি করে ময়লা ফেলার জন্য বাঁশের তৈরী ঝুড়ি। তারপরও প্রতিদিন ঐ গ্রামটি দেখতে ভীড় জমায় মানুষ। আমাদের দেশে এর থেকে সুন্দর গ্রামের কিংবা এলাকার কিন্তু অভাব নেই, অভাব শুধু উদ্যোগের। ঐ গ্রামটির পর্যটন বিকাশের ফলে সবচে বেশি উপকারভোগী কিন্তু স্থানীয়রাই।

মাউলিনং ভিলেজ (Mawlynnong Village) এর পাশেই Surok Mawlynnong নামক জায়গায় একটা পাথর আছে যেটা আরেকটা ছোট পাথরের উপর ভর দিয়ে আছে তবুও একটুও হেলছে না, এমনকি অনেক চেষ্টা কর আপনিও তা সামান্য নাড়াতে পর্যন্ত পারবেন না। এটার নাম ব্যালেন্সিং রক (Balancing Rock)। এটা রাস্তার একদম সাথেই, তবে স্থানীয়রা সেখানে একটি বেড়া দিয়ে রেখেছে যাতে তা রাস্তা থেকে দেখা না যায়, এবং তা দেখতে হলে ১০ রূপি দিয়ে টিকেট কেটে দেখতে হয়, তবুও কিন্তু অনেকেই যায় সেটা দেখতে।       


ডাউকি থেকে শিলং যাওয়ার পথে Mawjngih Lapnyshongdor View Point এ একটা রেস্টুরেন্ট “ব্রেকফাস্ট এন্ড লাঞ্চ সেন্টার”। খাবার অর্ডার দেয়ার পর পরিবেশন করতে ওরা কিছুটা সময় নেয় (১০ মিনিটের মত)। ঐ সময়ে আপনি চাইলে রেস্টুরেন্টে বসে না থেকে, পাশেই পাহাড়ী রাস্তার পাশ ঘেষে ভিউপয়েন্ট ঘুরে দেখতে পারেন। এখান থেকে একটা সুন্দর ভ্যালি দেখা যায়। তবে এখানের প্রবেশও কিন্তু ফ্রি নয়, জনপ্রতি ১০ রূপি, তবুও অনেকেই যায়!!





পর্যটন মেঘালায় রাজ্যের আয়ের বড় একটি উৎস। আর তা রাজ্য সরকার ও স্থানীয় মানুষজন ভালো করেই জানে। পর্যটক আকর্ষণ করতে তাই উভয় পক্ষই সচেষ্ট। মেঘালয় রাজ্য সরকার পরিচালিত মেঘালয় ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন তাই পর্যটকদের জন্য দিনব্যাপী বিভিন্ন ভ্রমণ প্যাকেজ অফার করে। যেমনঃ শিলং সিটি ট্যুর, সোহরা (চেরাপুঞ্জি) ট্যুর, মাওসিন্রাম Mawsynram (wettest place on earth) ট্যুর। পর্যটকরা স্বল্প খরচে প্যাকেজভুক্ত দর্শনীয় স্থান সমূহ ঘুরে দেখতে পারে এবং গাইডের কাছ থেকে সম্যক ধারণাও লাভ করে। এর তারা সাধারণত ৩০ সিটের বাস সার্ভিস ব্যবহার করে।এর বাইরে পর্যটকদের চাহিদামতো নির্ধারিত ভাড়ায় গাড়ীরও ব্যবস্থা আছে। বৃহত্তর সিলেটকে মডেল ধরে আমরাও চাইলে ওরকম প্যাকেজ ট্যুর অফার করতে পারি। তবে তার আগে দরকার সমন্বিত উদ্যোগ।



ওরা ওদের প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগিয়ে পর্যটনকে শিল্পে পরিণত করেছে। আমরাও চাইলে দেশের বিভিন্ন এলাকাকে কেন্দ্র করে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে পর্যটকদের আকর্ষন করতে পারি। আর সামান্য টাকা প্রবেশ দিতেও কেউ কার্পণ্য করবে না, যদি সেটা মনের খোরাক মেটায়। প্রবেশ ফি থেকে সংগৃহীত টাকা থেকে ঐ জায়গার উন্নয়ন, রক্ষণেবেক্ষন ও কর্মরতদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা সম্ভব। স্বল্প পরিসরে হলেও আমাদের সিলেটের টিলাগড় ইকোপার্কে তার শুরু হয়েছে। 




পাদটীকাঃ এই লেখায় আমি মেঘালয় ভ্রমণ নয়, ওখানকার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি নিজেদের দেশে প্রায়োগিক দিক বিবেচনা করে, তাই সবগুলো দর্শনীয় স্থান কিংবা দর্শনীয় স্থানসমূহের বর্ণনা বিশদভাবে উল্লেখ করা হয়নি, তবে ইন্টারনেট ঘাঁটলে সব পাবেন।